আপনার সন্তান অসুস্থ হলে, এমনকি যদি সাধারণ সর্দি-কাশিও হয়, তবে আপনার এবং আপনার ছোট্টটির পক্ষে কঠিন হতে পারে । আপনার সন্তানের এই সময় খাবারে অরুচি হতে পারে এবং ক্ষিদে কমে যেতে পারে । কিন্তু পর্যাপ্ত পুষ্টি না পেলে সংক্রমণের বিরুদ্ধে তার শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া কমে যেতে পারে । এই সময়ে আপনার বাচ্চার জন্য কোন খাবার ভাল তা জানা অপরিহার্য ।
বিভিন্ন বয়সের শিশুদের সর্দি-কাশির হলে কি কি খাওয়া উচিতঃ
১। বুকের দুধঃ- ছয় মাসের কম বয়সী নবজাতক এবং শিশুরা অসুস্থ হলে বুকের দুধ খাওয়ানোই হল সর্বোত্তম পছন্দ । বুকের দুধ অ্যান্টিবডিগুলির একটি ভাল উত্স এবং একটি শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় । আপনার শিশুকে খাওয়ানো শুরু করার আগে দেখে নিন তার যথেষ্ট ক্ষিদে আছে কিনা, কারণ অতিরিক্ত খাওয়ালে আপনার শিশুটি উপযুক্ত পরিমাণে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারে।
২। বার্লি জলঃ- অন্তত ছয় মাস বয়সী বাচ্চাদের জন্য এটি উপযুক্ত, বার্লি-জল জ্বর, সর্দি, এবং কাশির জন্য একটি দুর্দান্ত প্রতিকার । তবে, এটি গ্লুটেন অ্যালার্জিযুক্ত শিশুদের জন্য এটি উপযুক্ত নয় এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কারো এই অ্যালার্জি থাকলে সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক । কারণ এলার্জিটি আপনার সন্তানের মধ্যেও হয়তো ছড়িয়েছে এবং আপনি এখনও এই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন ।
৩। আপেলের সস বা আচারঃ- এটি স্টিউড আপেল নামেও পরিচিত, এগুলি সহজপাচ্য এবং শিশুকে হাইড্রেটেড থাকতে সাহায্য করে । এগুলি শরীরের তরলের মাত্রা পুনরায় সরবরাহ করে বলে, সর্দি-কাশি হলে এগুলি খুবই সুবিধাজনক ।
৪। ভাতের জল (ফ্যান) বা মণ্ডঃ- ছয় মাসের বেশি বয়সী বাচ্চাদের জন্য প্রস্তাবিত, চালের মণ্ড সর্দি-কাশির জন্য একটি দুর্দান্ত ঘরোয়া প্রতিকার । ভাতের জল কোনও সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করে, এমনকি একটি শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে তোলে ।
৫। মিষ্টি আলুঃ- মিষ্টি আলু পুষ্টির একটি সমৃদ্ধ উৎস এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি করে । এগুলি স্বেত রক্তকণিকা উত্পাদনে শরীরের সাহায্য করে । মিষ্টি আলু পোরিজের আকারে খাওয়া যেতে পারে অথবা ছয় মাসের ও তার বেশি বয়সী আপনার ছোট্টটির জন্য এগুলিকে আপনি চটকিয়ে এবং ভর্তা বানাতে পারেন।
৬। গাজরঃ- গাজর তার ঔষধি বৈশিষ্ট্যের জন্য সুপরিচিত । গাজর রোগপ্রতিরোধ প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস দূরে রাখতে পারে । গাজরকে সিদ্ধ করে এবং চটকিয়ে ছয় মাসের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য একটি পিউরি বা স্যুপ তৈরি করুন ।
৭। ডালিমের রসঃ- ডালিমের রসের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি আপনার সন্তানের সর্দি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে । ছয় মাসের বেশি বয়সের বাচ্চাদের সর্দি-কাশি থেকে পরিত্রাণ পেতে ডালিমের রস তৈরি করুন এবং সামান্য গোলমরিচ গুঁড়ো ও শুকনো আদা দিন।
৮।দই ভাতঃ- আপনার সন্তানের বয়স আট মাসের বেশি হলে, আপনি আদা ও সামান্য জিরে ফোড়ন দিয়ে দই-ভাত যে কোনও সময় সে অসুস্থ হলে তাকে দিতে পারেন । আপনার বাচ্চাটির যখন কাশি বা সর্দি হয়, নিশ্চিত করুন যে, দই যেন ঘরের তাপমাত্রাযর হয় এবং খুব ঠান্ডা বা টক যেন না হয় ।
৯। হলদি-দুধঃ- গরম দুধে সামান্য গোলমরিচ গুঁড়োর সঙ্গে মেশানো সামান্য হলুদ গুঁড়ো এক বছর বা তার বেশি বয়সী বাচ্চাদের সব রকমের সর্দি এবং গলার সংক্রমণ নিরাময়ের জন্য প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসাবে কাজ করে ।
১০। ভিটামিন সি-যুক্ত ফল ও সবজিঃ- আপনি যদি সর্দিতে ভোগা বাচ্চাকে কি খাওয়াতে হবে, সেই সম্পর্কে বিস্মিত, তাহলে আপনি অ্যান্টিবডি এবং স্বেত রক্তকণিকা উত্পাদন বাড়াতে সক্ষম ভিটামিন সি ধারণকারী সব ধরণের ফল এবং সবজি খাওয়াতে পারেন । এই ফল এবং সবজি সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করে ।
বিভিন্ন বয়সের শিশুদের সর্দি-কাশির হলে কি কি খাওয়া ঠিক নয়ঃ
১। গরুর দুধঃ- গরুর দুধ ভীষণ উত্তেজক বলে বিশ্বাস করা হয়। এটি এক বছরের বেশি বয়সের শিশুদের দেওয়া যেতে পারে। আপনার সন্তানের অসুস্থতার সময়ে, যে পরিমাণ দুধ খাওয়ান তা কমিয়ে দিতে পারেন অথবা খাওয়ানো বন্ধ করে দিতে পারেন। এছাড়াও আপনি এই সময়ে দুগ্ধজাত জিনিস, যেমন- চীজ বা পনির অথবা সোয় দুধ তাঁকে খাওয়াতে পারেন।
২। কিছু সবজিঃ- শশা, উচ্ছে বা করলা এবং কুমড়ার মতো সবজি, এক বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য উপযুক্ত নয়। প্রাথমিক কারণ, এগুলি শরীরে শীতল প্রভাব ফেলে। অতএব বাচ্চাদের কাশি পরিত্রাণ পেতে এই সবজিগুলি এড়ানো উচিত।
৩। পরিশোধিত চিনি এবং মিষ্টিঃ- খুব বেশি চিনি কারো জন্যই ভাল নয়, বিশেষ করে শিশুদের জন্য। সুতরাং, শিশুদের সর্দি-কাশি হলে যে খাবারগুলি এড়িয়ে চলতে হয়, তাদের মধ্যে এটি অবশ্যই আছে।