শীত আসা মানেই আমাদের ত্বকের আর চুলের একটু বেশি যত্ন নিতেই হয়। ত্বকের পাশাপাশি কিন্তু চুলের ক্ষেত্রেও এই সময়ে শুষ্ক হয়ে যাওয়া, স্ক্যাল্প শুকিয়ে যাওয়া, মরা চামড়া উঠে এসে চুলকানি এই সব সমস্যা এই সময়ে বেশি হয়। তাই শীতে চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য দশ রকমের অনবদ্য উপায় রইল আজ আপনাদের সামনে।
১। খুশকির সহজ সমাধানঃ- শীত মানেই চুলে আর স্ক্যাল্পে আর্দ্রতার অভাব। আর তার ফলে চুল শুকিয়ে যাওয়া, মরা চামড়ার প্রকোপ বৃদ্ধি হওয়া তো সাধারণ ঘটনা। এই সবের ফল হল খুশকি আর চুল পড়ে যাওয়া। খুশকির সমস্যা যদিও আমাদের সারা বছরের সমস্যা, তাও এই শীতের সময়ে এই সমস্যা আরও বেড়ে যায়। সবচেয়ে সমস্যা হয় এই সময়ে আমরা খুশকি আর মরা চামড়া এই দুইয়ের পার্থক্য করতে পারি না। তাই সমস্যা এই সময়ে বেশি হয়। একটু মাথা ঝাড়লেই মরা চামড়া আর খুশকি চুল থেকে ঝরে ঝরে পড়ে, যা খুবই দৃষ্টিকটু লাগে। কিন্তু এই সব সমস্যা, মূলত খুশকির সমস্যা থেকে সহজেই বেরিয়ে আসা যায়। এর জন্য সামান্য কয়েকটি জিনিসই লাগবে।
- যে কোনও একটি তেল নিয়ে হাল্কা গরম করে নিন। খুব বেশি গরম করার দরকার নেই। হাল্কা করে একটু উষ্ণ করে নিলেই হবে। যে তাপমাত্রায় আপনি চুলে ওই তেল দিতে পারবেন হাত দিয়ে ধরে সেই তাপমাত্রা পর্যন্ত গরম করে নিন।
- তারপর এই গরম তেলের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ চুলে আর স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করে রেখে দিন ২০ মিনিট মতো।
- তারপর কোনও মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে শ্যাম্পু করে নিন। অবশ্যই কোনও ভাল কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন শ্যাম্পু করা হয়ে যাওয়ার পর।
- এতে খুশকির সমস্যা অনেক কমবে। এটি সপ্তাহে তিন দিন করতে পারেন ভাল ফল পাওয়ার জন্য।
২। জমাট বাঁধা চুলের সমস্যাঃ- শীতে চুলের আরেক সমস্যা হল চুল জমাট বেঁধে থাকে। জমাট বাঁধা মানে হল, ধরুন আপনি টুপি পরলেন বা হুডি পরলেন, তারপর সেটি খোলার পর দেখবেন চুল কেমন একটা যেন পেতে থাকে। আর তখন যদি আপনি চুল ঠিক করতে যান চুলে জট পড়ে যায়।
- আর নয়তো চুল এলোমেলো হয়ে থাকে। আগের ঠিক অবস্থায় আর আসতে চায় না। অর্থাৎ চুল ম্যানেজেবল আর থাকে না। একে ফ্রিজ বলে থাকি আমরা। এর থেকে চুল কিন্তু অনেক সময়ে পড়েও যায়।
- আসলে টুপি বা হুডি পরার পর অনেক ক্ষণ চুলের মধ্যে দিয়ে হাওয়া চলাচল করতে পারে না। তখন চুল পেতে বসে থাকে স্ক্যাল্পের সঙ্গে। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান আছে।
- তার জন্য দরকার একটি মোটা বড় দাঁতের চিরুনি। আগে একটি প্লাস্টিকের বড় দাঁতের চিরুনি নিন। এই চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ান। তবে ওই জট আর পেতে বসা চুল আস্তে আস্তে আগের অবস্থায় ফিরবে।
- তারপর হাল্কা গরম জলে মাথা ধুয়ে নিন। সঙ্গে অবশ্যই হাল্কা কোনও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। কন্ডিশনার দিয়ে ১০ মিনিট মতো অপেক্ষা করে ঠাণ্ডা জলে ভাল করে চুল ধুয়ে নিন।
- এবার চুল শুকিয়ে গেলে দেখবেন চুল একদম ফুরফুর করছে।
৩। উজ্জ্বলতা কমে গেলেঃ- শীতে যেহেতু চুলে আর্দ্রতা থাকে না, তাই চুল শুকিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি চুলের উজ্জ্বলতাও কমে যায়। এখন চুলের সেই উজ্জ্বলতা বজায় রাখার জন্য কি করবেন! হাতের কাছে থাকা একটি সহজ জিনিসই আপনাকে এই সমস্যা থেকে উদ্ধার করবে।
- আগে চুল ভাল করে মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে নিন। তারপর শুধু মধু নিয়ে চুলের বিনুনি বরাবর লাগিয়ে নিন আর একটি শাওয়ার ক্যাপ লাগিয়ে নিন। এভাবে থাকুন প্রায় ৩০ মিনিট পর্যন্ত।
- তারপর অল্প উষ্ণ জলে আগে চুল ধুয়ে নিন। এটি সপ্তাহে তিন দিন পর্যন্ত করতে পারেন। মধু চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখে খুব ভাল করে। আর আর্দ্রতা থাকলেই চুল থাকবে সুন্দর আর উজ্জ্বল।
৪। সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্যঃ- চুলের সার্বিক ভাল রাখার এক এবং একমাত্র উপায় হল তেলের ম্যাসাজ। এর কিন্তু কোনও বিকল্প নেই চুল সব দিক থেকে ভাল রাখার জন্য। তেল ম্যাসাজ করলে সবার আগে আপনার স্ক্যাল্পের মধ্যে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।
এর ফলে অক্সিজেনের যোগান বাড়ে আর চুল অনেক বেশি মজবুত হয়ে ওঠে। আর সেই তেল যদি হয় অলিভ অয়েল তাহলে তো কথাই নেই। অলিভ অয়েল এই শীতে শরীরে মাখার পাশে চুলেও ব্যবহার করুন। ফল দেখে আপনিও অবাক হয়ে যাবেন।