+91 98304-64566 [email protected]

চুলের ক্ষেত্রে খুশকির সমস্যা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। আর এই শীতের সময়ে খুশকির সমস্যা একটু বেড়েই যায়। অনেক সময়ে অনেক কিছু ব্যবহার করেই খুশকির থেকে সম্পূর্ণ ভাবে মুক্তি পাওয়া যায় না। কিন্তু আজকের প্রতিবেদনে বলা এই কয়েকটি জিনিস মেনে চললে এবার খুশকির থেকে চিরকালের মতো মুক্তি পাবেন।

১। টি ট্রি অয়েলের ব্যবহারঃ- রাতে শুতে যাওয়ার আগে পরিমাণ মতো টি ট্রি অয়েল মাথায় মেখে নিন। হাল্কা হাতে অবশ্যই ম্যাসাজ করবেন। তেল কিন্তু গরম করার দরকার নেই। পরের দিন মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে শ্যাম্পু করে নিন। টি ট্রি অয়েলে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান এক মাসের মধ্যে খুশকির সমস্যা ৪১% মতো কমিয়ে আনে।
২। নারকেল তেলঃ- রাতে শুতে যাওয়ার আগে নারকেল তেল মাথায় মাখতে পারলে ভাল হয়। না হলে স্নানের এক ঘণ্টা আগে মেখে নিন। কিন্তু মাখার আগে তেল অল্প গরম করে নেবেন। অল্প ম্যাসাজ করে মেখে রেখে দিন আর শ্যাম্পু করে নিন। কন্ডিশনার অবশ্যই ব্যবহার করবেন। রোজ নারকেল তেল মাখলে খুব ভাল। না হলে এক ছাড়া ছাড়া অবশ্যই করুন।
৩। অ্যালোভেরার ব্যবহারঃ- অ্যালোভেরা জেল গাছ থেকে নিলে সেটা মিক্সিতে ঘুরিয়ে নিন আগে। আর দোকান থেকে জেল কিনলে তো খুবই ভাল। এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ চুলে ব্যবহার করুন। ৩০ মিনিট লাগিয়ে শ্যাম্পু করে নিন। এটি সপ্তাহে তিন দিন করলে খুব ভাল।
৪। অ্যাপেল সিডার ভিনিগারঃ- অ্যাপেল সিডার ভিনিগার স্ক্যাল্পে আর চুলে খুব ভাল করে লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট মতো রেখে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে শ্যাম্পু করে নিন। অবশ্যই ভাল কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন। সপ্তাহে দুই দিন এটি করলেই হবে।
৫। বেকিং সোডার ব্যবহারঃ- বেকিং সোডা আর অলিভ তেল ভাল করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ চুলে আর স্ক্যাল্পে লাগিয়ে নিন আর ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে এক দিন একটা করলেই খুশকি থেকে সহজে মুক্তি পাবেন।
৬। লেবুর রসঃ- দুটি উপকরণ খুব ভাল করে মিশিয়ে নিন। স্নানের এক ঘণ্টা আগে চুলে লাগিয়ে রেখে দিন। তেল গরম করার দরকার নেই। তারপর ভাল কোনও শ্যাম্পু দিয়ে শ্যাম্পু করে দিন। এক দিন বাদ দিয়ে দিয়ে এটি করুন।
৭। মেথির প্রয়োগঃ- মেথির বীজ আগের দিন সারা রাত জলে ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন এটি বেটে একটা পেস্ট বানিয়ে নিন। এর মধ্যে অলিভ, নারকেল, জোজোবা যে কোনও তেল দিয়ে দিন। ভাল করে মিশিয়ে চুলে লাগান আর ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এবার শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে তিন দিন করলেই হবে।
৮। টক দইঃ- শুধু টক দই দিয়েই খুশকির সমস্যা কম করা সম্ভব। টক দই ভাল করে ফেটিয়ে নিন। তারপর তা স্ক্যাল্পে, চুলে ভাল করে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এবার সাধারণ জল দিয়ে ধুয়ে শ্যাম্পু করে নিন। মাসে সুই থেকে তিন বার করলেই হবে।
৯। নিমের রসঃ- নিম পাতা জলে খানিক সেদ্ধ করে নিন। তারপর সেই নিম পাতা বেটে তার থেকে রস বের করে নিন। এই রস চুলে আর স্ক্যাল্পে ভাল করে লাগিয়ে নিন। ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে নিন। শ্যাম্পু না করলেও চলবে। আপনি চাইলে নিম তেলও ব্যবহার করতে পারেন।
১০। কমলালেবুর খোসাঃ- শীতের সময়ে এই প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। কমলালেবুর খোসা অল্প শুকিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে নিন। অনলাইনে অরেঞ্জ পিল পেয়ে যাবেন, তাও ব্যবহার করতে পারেন। এই খোসার সঙ্গে অল্প লেবুর রস মিশিয়ে সেটি জল দিয়ে বেটে নিন। এই মিশ্রণ চুলে ব্যবহার করলে খুব ভাল ফল পাবেন। শুধু ১৫ মিনিট চুলে লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু করে নিন, তাহলেই হবে।
১১।  ভিনিগারঃ- আগে ভিনিগার অল্প গরম করে নিন। এর মধ্যে ভিনিগারের অর্ধেক জল নিন আর দুটো উপকরণ ভাল করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ স্ক্যাল্পে, চুলে দিয়ে ৩০ মিনিট মতো অপেক্ষা করে ধুয়ে নিন। শ্যাম্পু না করলেও চলবে। সপ্তাহে তিন দিন করলেই হবে।
১২। ডিমের কুসুমঃ- গন্ধ সহ্য করে নিতে পারলে এর থেকে ভাল কিছু হয় না খুশকির হাত থেকে মুক্তি পেতে। কুসুম ভাল করে ফেটিয়ে নিন। চুল যেন অবশ্যই শুকনো থাকে। চুলে ফেটানো কুসুম দিয়ে এক ঘণ্টা রেখে দিন। ভাল করে এরপর শ্যাম্পু করে নিন। এক মাসের মধ্যে খুশকি দূর হয়ে যাবে সপ্তাহে তিন দিন করে ব্যবহার করলে।
১৩।  গ্রিন টি’র ব্যবহারঃ- দুটি টি ব্যাগ গরম জলে ভিজিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। তারপর টি ব্যাগ তুলে সেই জল ঠাণ্ডা করে নিন। এই জল এবার চুলে, স্ক্যাল্পে ব্যবহার করুন আর ২০ মিনিট রেখে দিন। এবার সাধারণ জলে চুল ধুয়ে নিন। এক দিন ছাড়া ছাড়া করতে পারলে খুবই ভাল।
১৪। তুলসী পাতার প্রয়োগঃ- তুলসী পাতা আগে ভাল করে ধুয়ে বেটে নিন। আমলা পাউডার এই তুলসী পাতা বাটার মধ্যে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ চুলে লাগিয়ে রেখে দিন ২৫ মিনিট। তারপর শ্যাম্পু করে নিন। আমলা থাকার জন্য খুশকি সুন্দর ভাবে দূর হয়ে যাবে।
১৫। আমলকির ব্যবহারঃ- আমলকি তিনটে নিন আর আগে সেদ্ধ করে নিন। তারপর বীজ বের করে সেই আমলকি চটকে নিন। এবার এই আমলকি চুলে লাগিয়ে এক ঘণ্টা মতো রেখে দিন। আমরা জানি আমলা চুলের জন্য কতো ভাল। এক ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে নিন। নিয়ম করে ব্যবহার করলে দুই মাসের মধ্যে খুশকি মুক্ত চুল পাবেন।
১৬। কলার প্যাকঃ- একটা কলা ভাল করে চটকে নিন। এর মধ্যে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ চুলে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর মাইল্ড কোনও শ্যাম্পু দিয়ে শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে এক দিন করে করলেই হবে।
১৭। রসুনঃ- রসুন আগে অল্প থেঁতো করে নিন। এর মধ্যে মধু মিশিয়ে সেই মিশ্রণ চুলে আর স্ক্যাল্পে ব্যবহার করুন। ১৫ মিনিট লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু করে নিন। ভাল করে শ্যাম্পু করবেন, না হলে গন্ধ থাকবে। সপ্তাহে দুই দিন করুন।
১৮। মেহেন্দির ব্যবহারঃ- ভাল ব্র্যান্ডের মেহেন্দি পাউডার আজকাল বাজারে পাওয়া যায়। সেই মেহেন্দি পাউডার জলে ৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সেই মেহেন্দির মধ্যে লেবুর রস মিশিয়ে স্ক্যাল্প আর চুলে ভাল করে লাগিয়ে নিন আর অন্তত এক ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। তারপর ভাল করে শ্যাম্পু করে নিন। এতে খুশকি অনেক কমে যাবে। সপ্তাহে এক দিন করে ব্যবহার করাই যথেষ্ট। মেহেন্দি চুলের সব দিক থেকে সুন্দর থাকার প্রধান চাবিকাঠি। অনেকে মেহেন্দির সঙ্গে ডিম, চা পাতা এসব দিয়ে থাকেন। কিন্তু খুশকির হাত থেকে রক্ষা পেতে শুধু মেহেন্দি ব্যবহার করলেই ভাল ফল পাওয়া সম্ভব।
১৯।  মুলতানি মাটির প্রয়োগঃ- মুলতানি মাটি আর জল মিশিয়ে একটা ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট চুলে আর স্ক্যাল্পে লাগিয়ে রাখুন ভাল করে ৩০ মিনিট। তারপর ধুয়ে নিন আর শ্যাম্পু করে নিন। শুধু স্কিনের ক্ষেত্রেই নয়, মুলতানি মাটি চুল বা স্ক্যাল্পের জন্যও খুব ভাল। মুলতানি মাটি যেহেতু ময়লা খুব ভাল পরিষ্কার করে তাই ময়লা, মরা স্কিন সেল সব দূর হয়ে যায়। আর ময়লা সহজে জমতে পারে না বলে খুশকি সহজেই দূর হয়ে যায়।
২০। লেমনগ্রাস অয়েল প্রয়োগঃ- লেমনগ্রাস এসেনসিয়াল অয়েল এখন অনলাইনে পাওয়া যায়। এই তেল নিয়ে চুলে আর স্ক্যাল্পে স্নানের দুই ঘণ্টা আগে লাগিয়ে রাখুন। তারপর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে শ্যাম্পু করে নিন। কন্ডিশনার অবশ্যই ব্যবহার করবেন। এই তেলের অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান খুশকি দূর করে দেয়। আর এমনিই যে কোনও ধরণের তেলের ম্যাসাজ স্ক্যাল্পের পি.এইচ লেভেল বজায় রাখার জন্য খুব দরকার। এতে স্ক্যালের ড্রাইনেস সহজে আসে না। তাই খুশকি হওয়ার সম্ভাবনাও অনেকটা কমে যায়।