+91 98304-64566 atnmediicaree@gmail.com

আপনার বাচ্চা যদি রাত্রে প্রতি ঘন্টায় জেগে ওঠে এবং তার প্রতিটি ক্ষণিকের মুহূর্ত আপনার কাছে এক ঝলক ধরা দেয়,তবে সেটি সম্ভবত তার বারংবার জেগে যাওয়ার ঘটনা।সম্ভাবনা হল সে হয়ত তার ঘুমের সময় আপনাকে দুঃখের সহিত জড়িয়ে রাখতে পারে এবং সময় এসেছে এ ব্যাপারে কিছু মনোযোগ দেওয়ার।যদিও 6 মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের বারংবার জেগে ওঠা হল সাধারণ একটি ঘটনা,এটি আবার অন্য কোনও কারণের সহিতও যুক্ত থাকতে পারে।এখানে রইল এ বিষয়ে আপনার যা যা জানা দরকারঃ

বারংবার জেগে ওঠা এবং সংক্ষিপ্ত ঘুম-চক্র কি শিশুদের জন্য স্বাভাবিক?

প্রায়শই সংক্ষিপ্ত ঘুম চক্র ছয় মাস বয়সী বাচ্চা এবং অল্প বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক।বাচ্চাদের ঘুম ভীষণ অগভীর হয়ে থাকে এবং তাদের একটানা ঘুমের ব্যপ্তি সাধারণত 50 মিনিটের খণ্ডের মধ্যে আবদ্ধ থাকার পরই তারা জেগে ওঠে এবং তারপর পুনরায় তারা ঘুমিয়ে পড়ে।আপনার বাচ্চা ধীরে ধীরে শিখবে কীভাবে দীর্ঘ সময় ধরে ঘুমাতে হয় এবং আয়ত্ত করবে ঘুমের জন্য কীভাবে নিজেকে শান্ত অথবা প্রশমিত করতে হয়।নিজেদেরকে শেখানোর তাদের এই চেষ্টাটিই দীর্ঘ সময় ধরে তাদের ঘুমানোর অথবা ঘুম চক্রের জন্য ধীরে ধীরে অভ্যস্থ করে তোলে।

কোন কারণগুলির জন্য কিছু বাচ্চা দীর্ঘ সময় ধরে একটানা ঘুমাতে সমর্থ হয় না?

১. পুষ্টি এবং ডায়েট

আপনার বাচ্চা কি পুষ্টির জন্য তার RDA (রেকমেন্ডেট ডায়েটারি অ্যালায়েন্স)এর সম্মুখীন হয়েছিল এবং আপনি কি তাকে ভালভাবে খাইয়েছিলেন?যদি আপনার সন্তান সঠিক পুষ্টি না পেয়ে থাকে অথবা পর্যাপ্ত খাবার না খায়,তবে সেক্ষেত্রে কিন্তু তার খিদে পাওয়ার কারণেও সে বার বার ঘুমের মধ্যে জেগে উঠতে পারে।আপনি ধীরে ধীরে তার খাবারের পরিমাণকে বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করতে পারেন অথবা বুকের দুধ যোগ করতে পারেন এবং লক্ষ্য রাখুন তার ঘুম চক্রে কি ঘটে।

২. তাকে আরামদায়ক রাখুন

আপনার সোনাটি সেই বয়সে নেই যে সে কথা বলতে পারে।তাই সে কোনও কিছুতে অস্বস্তিবোধ করছে কিনা তার লক্ষণগুলির উপর নজর রাখুন এবং তাকে প্রশমিত করে স্বস্তি প্রদানের প্রয়োজনীয়তাগুলির উপরেও আপনার খেয়াল রাখুন।দিনের মাঝামাঝি সময়ে পাওয়া কোনও আকস্মিক ঘা বা আঘাত থেকে হয়ত তার মধ্যে অস্বস্তি হতে পারে যা প্রায়শই অনেক রাত পর্যন্ত তার খেয়াল থাকে না,সারাদিন ধরে নিজেকে খেলা এবং উপভোগের মাধ্যে ব্যস্ত রাখার কারণে।এই ছোট ছোট জিনিসগুলি তার মধ্যে হয়ত বিরক্তির উদ্রেক করে এবং তার ভাল ভাবে ঘুমের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে।

৩. পেট ব্যথা

বাচ্চাদের পেটে জমে ওঠা বায়ু বা গ্যাসও মাঝে মধ্যে তাদের স্বল্প ঘুমের জন্য দায়ী হয়ে থাকে।পেটের ভিতরে আটকে থাকা গ্যাসের জন্য তাদের পেট ব্যথা করে যা ঘুমের মধ্যে তাদের খুব ঘন ঘন জাগিয়ে তোলে।এই মুশকিল আসান করার একটি সুন্দর উপায় হল তাদের ঢেকুর তোলানো।

৪. সাইলেন্ট রিফ্লাক্স

রিফ্লাক্সের লক্ষণগুলি শিশুদের রাত্রে ভালভাবে ঘুমের অন্তরায় হয়ে ওঠে।সাইলেন্ট রিফ্লক্সের ক্ষেত্রে আপনার সতর্ক দৃষ্টি রাখুন এবং ওষুধের পরামর্শের জন্য আপনার ডাক্তারবাবুকে জিজ্ঞাসা করুন।

৫. কোলাহলমুখর পরিবেশ

দিনের বেলায় আপনার বাড়ির পরিবেশ কোলাহলমুখর এবং ভীষণ অপ্রীতিকর শব্দে পরিপূর্ন হয়ে থাকলে তা আপনার বাচ্চাকে বিমর্ষ করে তোলে এবং তার ফল হিসেবে রাত্রেও সে নিজেকে স্থির করতে পারে না।প্রতিটি শিশুরই তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ার জন্য শান্ত পরিবেশে কিছুটা নিরিবিলি শান্ত সময়ের প্রয়োজন।

৬. দাঁত ওঠা

দাঁত ওঠা হল একটি প্রাকৃতিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া যা শিশুদের ঘুমের ভঙ্গিতে ব্যাঘাত ঘটায়।বাচ্চাদের দাঁত ওঠা শুরু হয় মোটামুটি তাদের ছয় মাসের কাছাকাছি বয়স থেকে এবং কখনও কখনও ঘুমের মধ্যে প্রায়ই জেগে ওঠার ব্যাপারটি জারি থেকে যায় তাদের সদ্য হাঁততে শেখার বয়স পর্যন্তও।

৭. অভ্যাস

আপনার বাচ্চা যদি প্রায়ই অনিয়মিত ভাব ভঙ্গিতে ঘুমাতে থাকে,এটি তার একটি অভ্যাস হয়ে থাকতে পারে।আপনাকে এটিকে পুনরায় নতুন করে নির্মাণের কাজ শুরু করতে হবে এবং তার জন্য কিছুটা ধৈর্য এবং সময় নিতে হবে।সময় বাড়ার সাথে অভ্যাসকে পরিবর্তন করে নতুন করে গড়ে তোলাও কঠিণ হয়ে ওঠে,তাই যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব এই কাজটি শুরু করা প্রয়োজন এবং এ ব্যাপারে আপনাকে মনে রাখতে হবে যে তাদের অভ্যেসকে নতুন করে গড়ে তুলতে আপনাকে তাদের রুটিনটিকে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করতে হবে।

৮. সংক্রমণ

এই সময় শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও তার বিকশের পর্যায়ের মধ্যেই থাকে তার ফলে তাদের মধ্যে অসুস্থতা ও সংক্রমণগুলির বাসা বাঁধার প্রবণতা বেড়ে ওঠে এবং এমনকি সাধারণ সর্দি কাশিকেও স্থান দিতে ভুলে যায় না।

আপনার সন্তানের ভালভাবে ঘুমে সাহায্যের উপযোগী কয়েকটি পরামর্শ

১. তাকে ভালভাবে খাওয়ান

তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বুকের দুধ বা ফরমূলা খাওয়ানো এবং দিনের বেলায় তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণের চাহিদাকে পূরণ করা নিশ্চিত করুন।ফল,সবজি,চর্বিহীন মাংস এবং দুধ এক্ষেত্রে প্রযোজ্য।আপনার বাচ্চা যদি ক্ষুধামান্দ্যের মুখোমুখি হয়ে থাকে সেটির উন্নতি ঘটাতে তাকে বারে বারে অল্প পরিমাণে খাবার খাওয়ান।ফরমূলার কৌটা বা প্যাকেটের উপর নির্দেশিত লেখা ভাল করে পড়ে পরীক্ষা করে নিন যে তার মধ্যে অ্যালার্জি হতে পারে এমন কোনও উপকরণ আছে কিনা।তার ঘুমের সহায়তার জন্য চুষিকাঠি ব্যবহারের চেষ্টা করুন এবং আপনার বাচ্চার পুষ্টির কোনওরকম ঘাটতি সম্পর্কে যদি চিন্তিত হয়ে থাকেন তবে আপনার ডাক্তারবাবুর থেকে এর জন্য ওষুধ বা পুষ্টিকর পরিপুরকগুলি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে নিন।

২. নির্দিষ্ট একটি সময়সীমা স্থির করুন

ঘুমের একটি সময়সীমা স্থির করুন এবং ঘুমাতে যাওয়ার এক ঘন্টা পূর্বে আপনার বাচ্চার সকল উত্তেজনাকে প্রশমিত করতে তাকে চুপচাপ শুয়ে রাখুন।রাতের উপযোগী মৃদু সুরে তার প্রিয় গানটি গাওয়ার মাধ্যমে তাকে শিথিল ও শান্ত করে তুলুন এবং সারাদিন ব্যাপী আপনার নির্ধারিত নির্দিষ্ট সময়গুলিতেই তাকে উচ্চ মানের একটি ঘুমে আচ্ছন্ন করারা দিকে মনোনিবেশ করুন।

৩. হোয়াইট নয়েজ যুক্ত করুন

শব্দ দু’ধরনের হয়ে থাকে-ভাল এবং খারাপ।হোয়াইট নয়েজ হল শিশুর তন্দ্রাচ্ছন্নকে আরও গভীর ঘুমে পর্যবসিত করার একটি অভূতপূর্ব এবং উপযোগী পন্থা।অনেক সময় ঘরের এক কোণে একটি ঘুরন্ত পাখা তাদের ঘুমের সময়ের সমস্যাগুলি সমাধানের ক্ষেত্রে দারুণ কাজ করে থাকে।

৪. তাদের ঘুমে এবং জেগে ওঠায় সাহায্য করুন

কীভাবে নিজেকে প্রশমিত করে ঘুমের ক্ষেত্রে সাহায্য করা যায় তা শেখানোর জন্য আপনি আপনার সন্তানকে সহায়তা করুন।যখন সে জেগে উঠবে খুব নমনীয় হয়ে মৃদু স্বরে তার সাথে কথা বলুন এবং হঠাৎ করে আচমকা তাকে তুলে দেবেন না অথবা ধরে ফেলবেন না।আপনার বাচ্চা ধীরে ধীরে নিজে থেকেই শিখে যাবে কীভাবে পুনরায় ঘুমিয়ে পড়তে হয় এমনকি আপনার অনুপস্থিতিতেও।

৫. তার দিবা নিদ্রাগুলির দিকে নজর রাখুন

হতে পারে আপনার বাচ্চা হয়ত সারাদিন জুড়ে অনেকগুলি দিবা-নিদ্রা পুষিয়ে নিতে পারে অথবা দিবা ঘুমগুলির সময়সীমাকে প্রলম্বিত করে তুলতে পারে,সেই কারণেই সে রাত্রি বেলায় তার বিছানায় শুতে যেতে দ্বিধাবোধ করে।ধীরে ধীরে তার দিবা-নিদ্রার সময়গুলিকে ঘুরিয়ে দিন এবং নিশ্চিত করুন যে দিনের বেলায় তারা খুব বেশি সময় ধরে ঘুমাবে না।

৬. পরিবেশের পরিবর্তন

আপনার সোনার জন্য তার ঘুমের পরিবেশটিকে পরিবর্তন করলে তা তার ঘুমের ক্ষেত্রে চমৎকার ভাবে কাজ করে।তার ঘুমের সূত্রগুলি প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করুন যেমন ঘুমের আবহ উপযোগী শব্দ সৃষ্টি করতে ফ্যান চালিয়ে দিন এবং পর্দাগুলি ঢেকে দিন।আপনার ছোট্টটিকে ঘুমে আচ্ছন্ন করে তোলার পূর্বে তার সাথে মৃদু স্বরে কথা বলুন এবং যতটা ধারাবাহিকতার সাথে হওয়া সম্ভব এই সকল সূত্রগুলি অনুসরণ করুন যাতে আপনার বাচ্চা সেগুলিকে সনাক্ত করে নিজেকে ঘুমের জন্য প্রস্তুত করতে পারে।

৭. একটি ক্রিব ওয়েজের ব্যবহার

আপনার সন্তান যদি ঐতিহ্যবাহী শিশুশয্যা বা গদির মত সমতল পৃষ্ঠতলের উপর শুয়ে ঘুমাতে অনেক বেশি সময় নেয়,আপনি তবে তাকে একটি ক্রিব ওয়েজের মধ্যে শোয়ানোর প্রচেষ্টা করতে পারেন।এর গদিটির এক প্রান্তকে উঁচু করে নিয়েও কাজে লাগানো যায় এবং এর নিচের ক্রিব ওয়েজটিকে বাচ্চাদের ঘুমের কোণ বরাবর সামঞ্জস্য রেখে স্থাপন করা হয়,যা তাদের আরামদায়ক ভাবে ঘুমাতে সাহায্য করে।

৮. দৃষ্টি সংযোগ এড়িয়ে চলুন

না,আমরা আপনাকে পলায়ন করতে বা এক মিনিট থাকার পরেই আপনার ছোট্টটিকে সম্পূর্ণ ভাবে একা ছেড়ে রেখেও চলে যেতে বলছি না।দৃষ্টি সংযোগ অথবা প্রাণচঞ্চল সঞ্চালনগুলি তাদের মস্তিষ্ককে উদ্দিপ্ত করে এবং তাদের প্রচণ্ড উত্তেজিত করে তোলে।এটি তাদের ঘুমে বাধার সৃষ্টি করতে পারে এবং কিছু সময়ের জন্য তার প্রতি আপনার দৃষ্টি নিক্ষেপকেও ব্যর্থ করতে পারে।এই সময় ঘরের তীব্র আলোর পরিবর্তে একটি মৃদু আলো জ্বালিয়ে রেখে শয়নকালীন একটি সঙ্গীত মৃদু স্বরে গাওয়ার পর ধীরে ধীরে সেই ঘরটি ত্যাগ করলে তা এ ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।

৯. তাকে ধরে রাখবেন না

আপনার বাচ্চা যদি ঘুমের মাঝে জেগে ওঠে সাথে সাথে তাকে ধরে তুলে নেবেন না।জেগে ওঠার পর এভাবে তাদের তুলে নেওয়ার পরিবর্তে বরং ঘুমের একটি আবহ গড়ে তুলতে পাখা চালিয়ে তার আওয়াজটিকে কাজে লাগান এবং তাকে পুনরায় ঘুমে আচ্ছন্ন করে তোলের জন্য সময় এবং জায়গা দিন।

১০. তাদের ডায়পার পরিবর্তন করুন

কৌশলগতভাবে তাদের ডায়পারের পরিবর্তন,আপনার বাচ্চাকে স্বাচ্ছন্দবোধ করায় এবং বিচলিত হওয়া থেকে মুক্ত রাখে।কল্পনা এবং কষ্টকে পাশে সরিয়ে,মধ্যরাত্রে খাওয়ানোর পর্যায়ের পূর্বেই তার ময়লা করে ফেলা ডায়পার পরিবর্তন করা এবং পুনরায় ভালভাবে নরম কাপড় দ্বারা তার গায়ের উপর ভালোভাবে জড়িয়ে তাকে মুড়ে রাখা নিশ্চিত করুন।রাতে খাওয়ানোর পরে ডায়াপার পরিবর্তন করার কারণে তারা উত্তেজিত হওয়ায় তাদের ঘুমিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়।সে জেগে ওঠার মুহুর্তটিতে এটি পরিবর্তন করুন এবং এটি একটি ভাল স্বাস্থ্যবিধি হিসাবে বিবেচিত।