চুল মহিলাদের সৌন্দর্যের অংশ। আর এই চুল নিয়েই তাদের চিন্তার শেষ নেই। চুল পরে যাওয়া, পাতলা হয়ে যাওয়া, উঠে যাওয়া – এই সমস্যাগুলো থেকে রেহাই পান না ছোট্ট খুকি থেকে শুরু করে কিশোরী, তরুণী কিংবা বৃদ্ধা কেউই। স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিনই কিছু না কিছু চুল ঝরে যায়।
কিন্তু খুশকি, ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন, হরমোন, দুশ্চিন্তা, অপুষ্টি এসব কারনে চুল বেশি পরে। প্রাকৃতিক নিয়মানুসারে দিনে ১০০ থেকে ২০০ চুল পরা স্বাভাবিক। কিন্তু এই চুল পরার হার বেড়ে গেলে তা অস্বাভাবিক হিসেবে ধরে নেয়া যায়।
চুল পরা রোধে কিছু ঘরোয়া টিপসঃ
সাধারনত খুশকি বা ফাঙ্গাসের আক্রমনে চুল বেশি পরে। অনেকই হিজাব পরেন কিংবা ভেজা চুল বেধে রাখেন। এতে করে চুলের আগা ফেটে যায়, গোড়া নরম হয়ে যায়, উঁকুন এবং ফাঙ্গাসের আক্রমন ঘটে। এ থেকে মুক্তি পেতে লেবু বা টকদই ব্যবহার করতে পারেন। তেলের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে তা স্ক্যাল্পে মালিশ করতে হবে এবং আধঘন্টা থেকে চল্লিশ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে।
টক দইয়ের ব্যবহারও একইরকম। এছাড়া চুলের রুক্ষতা দূর করতে স্ক্যাল্প ছাড়া শুধু চুলে লেবুর রস লাগিয়ে কয়েক মিনিট পর শ্যাম্পু করে ফেললে চুলের রুক্ষতা দূর হবে। তবে লেবু বা টকদই কোনোটিই সরাসরি চুলে ব্যবহার করা যাবে না বা বেশিক্ষন চুলে রাখা যাবে না। তাতে চুল ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।
প্রয়োজনীয় পুষ্টিঃ
প্রয়োজনীয় পুষ্টি না পেলে যে কোনো কিছুই নষ্ট হয়ে যায়। চুলের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। দেহে পুষ্টির ঘাটতি থাকলে চুল পরা বেড়ে যায়। চুল পরা রোধে তাই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি। সামুদ্রিক মাছ, বাদাম, ডিম, মাংস, শাক-সবজি, ফলসহ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে নিয়মিত। এতে করে চুল তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে।
প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে। কোনোভাবেই শরীরে পানির ঘাটতি হতে দেয়া যাবে না এবং অবশ্যই পর্যাপ্ত সময় ঘুমাতে হবে। ঘুম ঠিক না থাকলে, অনেকদিন ধরে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বা বেশি রাত জাগলেও চুল পরা বেড়ে যায়। তাই এই বিষয়গুলো আগে ঠিক করতে হবে।
চুল পরা রোধে অ্যালোভেরাঃ
চুল পরা রোধে অ্যালোভেরা খুবই উপকারী। আর এটি সহজলভ্যও। চাইলেই হাতের কাছে পাওয়া সম্ভব। অ্যালোভেরা স্ক্যাল্পের অ্যালার্জি নিরাময় করে ও চুলের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
অ্যালোভেরা পাতা থেকে নেয়া জেল তেলের সাথে গরম করে স্ক্যাল্পে মালিশ করলে খুব দ্রুতই উপকার পাওয়া যায়। চাইলে সাথে কয়েকটি নিমপাতাও দিতে পারেন। অ্যালোভেরা পাতা থেকে সংগৃহীত জেল সরাসরি চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করে আধঘন্টা পর ধুয়ে ফেলুন। কয়েকবার ব্যবহারেই ফলাফল পাবেন।
আমলকির তেল স্ক্যাল্পে মালিশঃ
আমাদের আশেপাশে হরহামেশাই পাওয়া যায় এমন একটি ফল আমলকি। আকারে ছোট্ট হলেও এটি অনেকরকম পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে চাইলে নিয়মিত আমলকি খেয়ে দেখুন। নিষ্প্রাণ চুলে উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে এর জুড়ি মেলা ভার।
চুলের যত্নে পেঁয়াজঃ
চুলের যত্নে পেঁয়াজ খুবই উপকারী। প্রাকৃতিকভাবে চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করতে এর জুড়ি নেই। পেঁয়াজের রস তেল কিংবা লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে স্ক্যাল্পে মালিশ করলে চুল পরা কমে যায়।
তাছাড়া পেঁয়াজে থাকা ভিটামিন, মিনারেল, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, সালফার ও নানান রকম অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট স্ক্যাল্পের ইনফেকশন প্রতিরোধ করে, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে, চুল পরা কমায়। এটি উঁকুন দূর করতেও সাহায্য করে এবং স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়।
চুলের ড্যামেজ সারাতে ডিমঃ
চুলের ড্যামেজ সারাতে ডিম খুবই উপকারী। এটি চুলের নিষ্প্রাণ এবং রুক্ষ ভাব দূর করে। ডিমের সাদা অংশ ভালোভাবে ফেটিয়ে নিয়ে পুরো চুলে মাস্ক হিসেবে লাগিয়ে ত্রিশ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ফেলুন। চুলে প্রাণ ফিরে আসবে। অনেকে চুলে ডিমের গন্ধ সহ্য করতে পারেন না। তারা ডিম ফেটিয়ে সাথে গোলাপজল ও তেল মিশিয়ে নিতে পারেন।
অন্যান্য টিপসঃ
চুল পরার আরেকটি প্রধান কারন হলো ভেজা চুল আঁচড়ানো। কখনোই ভেজা চুল আঁচড়াবেন না বা বেধে রাখবেন না। তাতে আপনি যত্ন যতই নেন না কেন চুলের, তা কোনোই কাজে আসবে না। চুল লম্বা বা খাটো যেমনই হোক, রাতে চুল জট ছাড়িয়ে ভালোভাবে আঁচড়ে বেণী করে বা বেধে ঘুমাতে যাবেন।
মেহেদী চুলের জন্য খুবই উপকারী। এটি চুলের গোড়া মজবুত করে, স্ক্যাল্প ঠান্ডা রাখে, চুলের রুক্ষতা দূর করে ও আর্দ্রতা ধরে রাখে। মেহেদী পাতা বাটা বা গুঁড়োর সাথে ভিটামিন ই-ক্যাপসুল মিশিয়ে লাগালে চুল পরা কমে যায়। মেহেদীর অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল গুণ খুশকি রোধেও ভূমিকা রাখে। চুলকে কন্ডিশনিং করতে চাইলে মেহেদীর চেয়ে উপকারী কোনো উপাদান নেই। এটি চুলকে ঘন ও উজ্জ্বল করে।
নিমপাতার ঔষধি গুণের কোনো শেষ নেই। চুলের যত্নেও এটি কার্যকরি ভূমিকা রাখে। নারিকেল তেলে নিমপাতা জ্বাল দিয়ে নিমের তেল তৈরি করে সেই তেল ব্যবহারে উঁকুন দূর হয়, স্ক্যাল্পের মরা চামড়া উঠে যায়, চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।
দুশ্চিন্তা চুলের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই চুলের ভালো চাইলে যে করেই হোক দুশ্চিন্তা কমাতে হবে। আর এটা আপনাকেই করতে হবে। মানসিক চাপ বা আকস্মিক মানসিক আঘাতের কারণেও চুল পরতে পারে।
আপনি চুলের যত্নে যা-ই করেন না কেন তা ধৈর্য্য ধরে করে যেতে হবে। কারন ঘরোয়া এই উপকরনগুলো কাজ করতে কিছুদিন সময় নেয়। তাই এক/দুদিন এসব করে এরপর কাজ হয় না বললে হবে না, ধৈর্য্য ধরে টানা যত্ন নিতেই হবে।