+91 98304-64566 atnmediicaree@gmail.com

নিমগাছ বহু শতাব্দী ধরেই আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে সব রোগের মুশকিল আসান হিসেবে গণ্য হয়ে এসেছে। এমনকি আজকের দিনেও ডাক্তাররা নিমের নির্যাস হজমঘটিত সমস্যা, লিভারের সমস্যা, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগে প্রেসক্রাইব করেন। নিমপাতা নিমবিনের মত সক্রিয় উপাদানে থাকে ভরপুর। নিমপাতা নিয়মিত খেলে আপনি পেতে পারেন একাধারে খুশকি বিহীন চুল, ব্রণমুক্ত ত্বক এবং আলসার বর্জিত পাকস্থলী।

কেন নিম চিকিৎসাবিদ্যাগত দিক থেকে এত গুরুত্বপূর্ণ?

আয়ুর্বেদ, ইউনানী, হোমিওপ্যাথি থেকে আজকের মডার্ন মেডিক্যাল সায়েন্স সবাই একবাক্যে নিমের অপরিহার্যতাকে মাথা পেতে নিয়েছে।

নিমপাতা, ফুল, বীজ, ফল, শেকড় থেকে ছাল সবকিছুই ভেষজ গুনে সমৃদ্ধ।

প্রায় ১৪০রকমের কম্পাউন্ড পাওয়া যায় নিমের বিভিন্ন অংশ থেকে যা নিমবিন, ভিটামিন সি ও নানা ফ্ল্যাভেনয়েড এ পরিপূর্ণ।

এগুলো আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন ও মৌল বের করে দিতে সহযোগিতা করে।

গবেষণায় দেখা গেছে নিমপাতা শারীরবৃত্তীয় অন্তরপ্রদাহ, সংক্রমণ ও ক্যানসারের সম্ভাবনা হ্রাস করে।

বর্তমান বিশ্বে নিম একধারে অ্যান্টিসেপটিক, ছত্রাকনাশক, ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাসরোধক, ম্যালেরিয়া এর নিরাময়ে, দাঁতের চিকিৎসায় ও চ্যাগাস রোগ প্রতি এন্টিঅক্সিডেন্ট এর প্রভাব:

নানারকম প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গি ও ভাইরাস দমনে অত্যন্ত কার্যকরী হলো নিমপাতা।

নিম্বলাইড এর মত পলিফেনল এটিকে বানায় উত্তম এন্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীর থেকে দূষিত মৌলগুলিকে বের করে এবং কোলাকোষ ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতেও তৎপর হয়ে ওঠে।

পাশাপাশি আথারোস্ক্লেরোসিস, ক্যানসার, সিরোসিস ও প্রদাহজনিত ব্যাথা থেকে মুক্তি দান করে।

ডায়াবেটিস প্রতিষেধক:

নিমের সবচেয়ে গুনগত দিক হলো এন্টি ডায়াবেটিক হিসাবে কাজ করা।

দেখা গেছে ২৫০গ্রাম নিমপাতার নির্যাস শরীরের প্রতিকেজিতে গ্লুকোজ এর মাত্রা কমাতে ভীষণ ভাবে উপকারী সিদ্ধ হয়েছে।

পাতাতে অবস্থিত রাসায়নিক শরীরে উৎসেচক এর ক্ষমতা হ্রাস করে এবং গ্লুকোজ মেটাবলিজম কমায়।

ফলে সুগার লেভেল থাকে নিয়ন্ত্রণে।

বিভিন্ন স্টাডিজ আরো বলছে যে অগ্ন্যাশয়ে ইনসুলিন গ্রন্থির পূর্ণর্নির্মাণে এবং রক্তে কোলেস্টেরল এবং ক্রিয়েটিনিন কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিচ্ছে নিমপাতা।

ত্বকের সমস্যার নিবারণ :

বহুকাল জুড়েই রূপচর্চার অন্যতম প্রসাধন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে নিম।

, ঘা, ফোস্কা এগুলোর উপর নিমপাতা বেটে লাগালে তার ফল মেলে হাতেনাতে।

ভেষজ ময়শ্চারাইজার হিসেবেও নিমকে অনেকে ব্যবহার করে থাকেন।

নিমের সাথে বেসিল বা গ্রীনটির নির্যাস একসাথে মিশিয়ে লাগালে তা জব্দ করে ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া স্টেফাইলোকক্কাস এপিডার্মিস কি।

পুলটিস ও প্রলেপ রূপেও নিমপাতাকে ফাঙ্গাল ও ব্যাকটেরিয়াল ত্বকের সংক্রমণ, দাদ, হাজা, চুলকুনি, একজিমা ইত্যাদি দূর করতে ব্যবহার করা হয়।

নিমের সাথে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে লাগান দেখবেন ত্বকের জেল্লা থাকবে অটুট এবং স্কিনটোন হবে জবর।

চুলের যত্নে নিমপাতা :

উজ্জ্বল, মজবুত চুল পেতে নিম পাতার জুড়ি মেলা ভার।

নিমপাতা জলে সেদ্ধ করে সেই জল ভালোমতো মাথার স্ক্যাল্পে লাগান তারপর শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন। এতে চুলের গোড়া আলগা হওয়া রোধ হবে সাথে কমবে চুল পড়াও।

নিম খুশকির সমস্যা থেকে দেবে আপনাকে মুক্তি এবং আপনার সম্পদ হবে খোলামেলা কোমল চুল।

মধু ও নিমপাতার রস একসাথে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় মালিশ করতে পারেন তাতে করে শুষ্ক ও রুক্ষ মাথার তালুর সমস্যা থেকে পাবেন মুক্তি।

নিমপাতাতে এমনিতেই এন্টিইনসেক্টইসাইড গুন থাকায় উকুন এর জ্বালা থেকেও মুক্তি পাবেন।

শ্যাম্পু করার পর নিমপাতা ভেজানো জল চুলে লাগাতে পারেন জৈব কন্ডিশনার হিসাবে।

লিভারের যত্নে:

নিমপাতা বিলিরুবিন ও প্রোটিন এর লেভেলে হেরফের করে লিভার করে তোলে সতেজ।

দেখা গেছে প্যারাসিটামল বা টিবি রোগে ব্যবহৃত ড্রাগ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে তৈরি হওয়া লিভারের ক্ষত সারাতেও কার্যকরী হয়েছে নিমপাতা।

লিভারকে নানা জটিল সমস্যার থেকে রক্ষা করে নিমপাতা।

দাঁতের সমস্যা:

সেই প্রাচীনকাল থেকেই নিমের বাকলের দাঁতন দিতে দাঁত মাজার প্রচলন রয়েছে।

নিমের ডাল জৈব টুথপেস্ট রূপে গৃহীত হয়।

নিমপাতার নির্যাস জলের সাথে মিশিয়ে দাঁতে লাগালে দাঁতের এনামেল এর ক্ষয়, পোকার আক্রমণ, মুখের আলসার, রক্তপাত, মাড়ির রোগ, জিঞ্জিভাইটিস রোগ প্রভৃতি সেরে যায়।

এছাড়াও জন্ডিস, ম্যালেরিয়া প্রভৃতি রোগে নিমপাতার গ্যাডোনিন যৌগ খুবই কাজে দেয়। ভাইরাসের প্রভাবকে দূরীভূত করে। সাথে নিমতেলে থাকা ট্রাইগ্লিসারয়েড ও নানা পলিস্যাকারাইড পক্স হাম ইত্যাদি রোগের সংক্রমণ আটকাতে সাহায্য করে। ঘরে মশা তাড়াতেও নিমতেল স্প্রে করতে পারেন যা কাজ দেবে মস্কিটো রেপেলেন্ট এর মত।