+91 98304-64566 atnmediicaree@gmail.com

ঘুম কি নিয়মিতই কম হচ্ছে? রাত হলে সময় মতো বিছানায় যান ঠিকই কিন্তু ঘুম আসে না কিছুতেই! ঘুমের জন্য অপেক্ষা করতে করতে রাতের প্রায় অর্ধেকটাই পার হয়ে যায় বিছানায় এপাশ ওপাশ করে।

এমন সমস্যায় যারা ভোগেন, তারা অনেকেই ঘুমানোর জন্য ঘুমের ওষুধের সাহায্য নিয়ে থাকেন। কিন্তু ঘুমের ওষুধের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীলতাও আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

চলুন জেনে নেওয়া যাক কম ঘুমের জন্য শরীরে কী কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বৃদ্ধি করে: পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বা কম হলে বাড়তে পারে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা। চিকিৎসকদের মতে আমরা না ঘুমালে আমাদের শরীরের ‘লিভিং অরগানিজম’গুলো ঠিক মতো কাজ করতে পারে না। নষ্ট হতে পারে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য। বাড়তে পারে উচ্চ রক্তচাপ, হাইপার টেনশনের মতো সমস্যা।

হার্টের সমস্যা বৃদ্ধি করে: আমরা যখন ঘুমাই তখন আমাদের হৃদপিণ্ড এবং রক্তনালী কিছুটা হলেও বিশ্রাম পায়। কিন্তু ঘুম না হলে বা কম হলে প্রতিনিয়ত কার্ডিওভ্যস্কুলার সমস্যা বাড়তে থাকে। এর ফলে হার্টের সমস্যা বাড়তে থাকে।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়: দীর্ঘদিন রাতে না ঘুমানো বা কম ঘুমানোর ফলে শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন ব্যহত হয়। যার ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে: ঘুম মূলত আমাদের শরীরের ক্ষয়ক্ষতি পূরণ ও শক্তি সঞ্চয়ের একটি পন্থা। যখন আমরা ঘুমাই, তখন আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য দায়ী ‘লিভিং অরগানিজম’ কাজ করতে থাকে। কিন্তু আমরা না ঘুমালে এই ‘লিভিং অরগানিজম’গুলো কাজ করতে পারে না। ফলে ক্রমশ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে।হজমের সমস্যা বৃদ্ধি করে: প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বাড়তে পারে হজমের সমস্যাও। আমরা না ঘুমালে আমাদের শরীরের পাচন ক্রিয়ায় সাহায্যকারী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে খাবার হজমে সহায়ক পাচক রসগুলি উপযুক্ত মাত্রায় নিঃসরণে বাধা পায়। তাই হজমের নানা সমস্যা শুরু হয় ।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে এই রোগে নিপীড়িত মানুষের হৃদয় অসুখ, বিষণ্নতা ও অন্যান্য রোগে ভোগার সম্ভাবনা বেশি। এদের ক্ষেত্রে বাড়ীতে বা রাস্তায় দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেশী থাকে। এমন অনেকেই আছেন যারা ডাক্তারের পিছনে অনেক টাকা ঢেলেও উপকার পান নাই। ঘুমের ঔষুধ ছাড়া ঘুমাতে পারেন না। আপনার আশেপাশেই র‌য়েছে এমন অনেক মানুষ। আপনি কি তাদের মত ঘুমাতে পারছেন না?

তাহলে জেনে নিন কি করে এই অনিদ্রা দূর করবেন-

১) অ্যালকোহল ত্যাগ করুন :- কারো কারো ধারণা অ্যালকোহল ঘুমের জন্য বেশ সহায়ক। কিন্তু অতিরিক্ত অ্যালকোহল মস্তিষ্কে ঘুমের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। অ্যালকোহল পানে একটানা ঘুম হয় না, বারবার ঘুম ভেঙে যায়। অনেক সময় ঘুম আসেই না। তাই ভালো ঘুমের জন্য ত্যাগ করতে হবে অ্যালকোহল।

ধূমপান ছাড়ুন :- আপনি যদি ধূমপানে আশক্ত হন, অনিদ্রার অন্য কোন কারন খোঁজার দরকার নেই। ঘুমনোর আগে ধূমপান করা আরও ক্ষতিকর। নিকোটিন আমাদের নার্ভতন্ত্রকে উত্তেজিত করে এবং রাতে ঘুমোতে দেয় না। ধূমপান ছাড়ুন এবং পার্থক্য দেখুন শুধু ঘুমের বেলায় না।

ব্যায়াম করুন :- অনেক গবেষণা আছে যেখানে দেখা যায় যে ব্যায়াম ঘুম উন্নত করতে সাহায্য করে। অনিদ্রায় আক্রান্ত রোগীরা যারা নিয়মিত ব্যায়াম করে তাদের রাতের ঘুম বেশী ভালো হয়।

শান্ত জায়গা :- মাঝে মাঝে, অনিদ্রা ঘুমের পরিবেশের কারণে হয় যা বিশ্রামের সহায়ক নয়। যদি বারবার আপনার ঘুম ভেঙ্গে যায় উচ্চ সোরগোলের কারনে, তাহলে আপনার ঘুমের প্যাটার্ন বেজায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নিশ্চিত করে নিন যে ঘরে আপনি ঘুমোবেন সেই জায়গাটা শান্ত।

২) দুধ পান করুন :- অনেকের অবশ্য দুধ হজম হয় না। কিন্তু যাদের দুধপানে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটে না তারা ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস দুধ পান করতে পারেন। দুধ পান আপনার ভালো ঘুম নিশ্চিত করে।

৩) দুশ্চিন্তা করবেন না :- দুশ্চিন্তা অনিদ্রার অন্যতম কারণ। সব সময় চেষ্টা করুন দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে। অনেকে আবার দুশ্চিন্তা করেন ‘ঘুম আসছে না’ এই ভেবে। ঝেড়ে ফেলুন সব দুশ্চিন্তা। অবগাহন করুন ঘুমের গহিন সমুদ্রে।

৪) উত্তেজক কোনো কিছু পরিহার করুন :- অনেকে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সিগারেট কিংবা কফি পান করেন। এ দুটোই ঘুমের জন্য ক্ষতিকর। সিগারেটের নিকোটিন এবং কফির কেফিন স্নায়ুর উত্তেজনা ঘটিয়ে তাড়িয়ে দেয় ঘুমটাকে। একই কথা প্রযোজ্য চকোলেট এবং ব্যথানাশক ওষুধের ক্ষেত্রে। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধগুলোও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। যারা চাইনিজ খাবারের অভ্যস্ত তাদেরও দেখা দেয় অনিদ্রা। তাই সুখকর ঘুমের জন্য এ সবকিছুই পরিহার করতে হবে।

৫) গান শুনুন :- হার্ড গানগুলো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় কিন্তু আপনি যদি লাইট অফ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে শরীরটাকে শিথিল করে ধীরলয়ে গান শুনতে থাকেন দেখবেন এক সময় ঘুমের ঢল নেমে আসবে আপনার চোখে।

৬)সঠিক বিছানা :-ঘুমনো কঠিন হতে পারে যদি আপনার বিছানায় খুব নরম বা খুব শক্ত হয় বা যদি আপনার বালিশ সঠিক না হয়। নিশ্চিত করে নিন যে আপনার বিছানা আপনার নির্দিষ্ট চাহিদা ও প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট আরামদায়ক। বিছানার জন্য সঠিক গদি বেছে নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ।

৬) সালাদ খান বেশি করে :- আপনি যদি নিয়মিত লেটুস খান আপনার ঘুমটা ভালো হবে। যদিও সালাদ ঘুমের জন্য বেশ সহায়ক তবু এর মধ্যে লেটুস নিদ্রা উদ্রেককারী হিসেবে কাজ করে। তাই আপনি যখন সালাদ খাবেন সালাদে লেটুস খেতে ভুলবেন না।

৭) ঘুমের ওষুধ খাবেন না :- কেউ কেউ ঘুমের জন্য নিয়মিত ঘুমের ওষুধ খান। কিন্তু এটা চলতে থাকলে ওই ওষুধটার প্রতি নির্ভরতা চলে আসে যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই চেষ্টা করুন ঘুমের ওষুধ বাদ দিয়ে প্রাকৃতিকভাবেই ঘুমাতে