অনেকেই হাত পায়ে শরীরে জ্বালা-পোড়া করার সমস্যায় ভুগে থাকেন। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর সময় হাত-পায়ে প্রচণ্ড জ্বলন অনুভব করেন। আবার শুধু রাতেই না, এই জ্বলন যেকোনো সময় অনুভব করেন। আর যা খুব অসস্ত্বিকর এবং কষ্ট দায়ক হয়ে থাকে।
বিশেষ করে নারীদের মেনোপজের সময় আকস্মিকভাবে আগুনের উল্কার মতন শরীরে গরম অনুভূত হওয়া, রাতের বেলায় ঘাম হওয়া, ঘুম না হওয়া, দুশ্চিন্তা হওয়া, মনমরা ভাব অতি সাধারণ ঘটনা।
ওয়েস্ট্রোজেন হরমোনের অভাবে এরকম অনুভূতি হয়। এটি মানুষের ব্রেইন বা মস্তিষ্কের সাথে সম্পৃক্ত।
সাধারণত তাপমাত্রার পরিবর্তন হলে শরীর সেটির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়। কিন্তু যখন ওয়েস্ট্রোজেন হরমোন কমে যায়, মানবদেহে থার্মোস্টেট বা তাপমাত্রা বোধের বিষয়টি এলোমেলো বা দুর্বল হয়ে যায়। ফলে, অনেক সময় মস্তিষ্ক মনে করে শরীরে অতিমাত্রায় গরম লাগছে।
ওয়েস্ট্রোজেন হরমোনের কারণে মানুষের মুড বা মেজাজের উপরেও প্রভাব পড়ে। এই হরমোনের পরিমাণ কমে গেলে দুশ্চিন্তা বাড়তে পারে ও মনমরা ভাব হতে পারে।
তাছাড়া অনেক কারনে হতে পারে-
কিডনি ও থাইরয়েড সমস্যা থাকলে।
শরীরে ভিটামিন বি ১২ ও বি ১-এর অভাব হলে।
মদ্যপান ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি রোগ থাকলে।
জ্বালাপোড়ার বড় কারণ হতে পারে অনিয়ন্ত্রিত ও দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস।
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় পায়ে জ্বালাপোড়া হতে পারে, যেমন যক্ষ্মা রোগে ব্যবহৃত আইসোনিয়াজিড, হৃদরোগে ব্যবহৃত অ্যামিওড্যারোন, কেমোথেরাপি ইত্যাদি।
ছত্রাক সংক্রমণ।
রক্ত চলাচলে সমস্যা।
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ।
বিষণ্ণতা থেকেও মাথা জ্বালা-পোড়া করা, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ জ্বলে। কখনও কখনও পুরো শরীর জ্বালা-পোড়া করে।
নারী যদি গর্ভবতী হন তাহলে এটা কোলেস্টাসিসের কারণেও হতে পারে। তবে এই জ্বলন থেকে পরিত্রাণ পেতে ঔষধ এর উপর নির্ভর না হয়ে, প্রাকৃতিক বিভিন্ন বস্তু ব্যবহার করেও মুক্তি পেতে পারেন।
চলুন জেনে নেয়া যাক হাত ও পায়ের জ্বালা-পোড়া থেকে মুক্তির কয়েকটি পদ্ধতিঃ
রাতে ঘুমানোর আগে গোসল করুন
রাতে হাত-পা জ্বালা পোড়া থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন রাতে বিছানায় যাওয়ার আগে গোসল করুন। গোসলের সময় মনে রাখবেন-
১ । জল যেনো কিছুতেই গরম না হয়। গরম পানি শরীর থেকে প্রাকৃতিক তেল ধুয়ে দিতে পারে ফলে স্কিন ড্রাই হয়ে যেতে পারে।
২। দীর্ঘ সময় গোসল না করে স্বল্প সময় গোসল করুন, বেশি সময় গোসল করলেও ত্বক ড্রাই হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থকে। ফলে জ্বলন আরো বেড়ে যেতে পারে।
ময়শ্চারাইজার ব্যাবহার করুন
জ্বলন এবং চুলকানি প্রশমিত করতে ওয়েল বেজ লোশন ব্যবহার করুন। এতে করে ত্বক সফট হবে ও এতে স্কিনের সেলসগুলোকে রক্ষা করবে। বর্তমানে ওষুধের দোকানগুলোতে এমন অনেক লোশন পাওয়া যায়। এতে করে আপনার হাত ও পায়ের তলার জ্বলন ও চুলকানি প্রশমিত হতে পারে। তাই রাতে ঘুমানোর আগে ও গোসলের পর ভেজা শরীরে লোশন ব্যবহার করুন।
টক ফল খান
প্রতিদিন অল্প পরিমাণে হলেও যেকোনো টক ফল পানি মিশিয়ে ১ ঘণ্টা পরপর খাওয়ার অভ্যাস করুন। প্রথমে শরীরকে অ্যাসিডমুক্ত রাখুন। এটি খালি পেটে খাওয়ার অভ্যাস করুন। চাইলে হালকা খাবার খেতে পারেন। প্রতিদিন ৫০ গ্রাম আঙুর খেলেও জ্বালা কমবে। এছাড়া পায়ের ফাটা ভাব কমলেও হাতের কোমল ভাব বজায় থাকবে।
প্রচুর পানি পান করুন
শরীরে পানি শূন্যতা হলেও জ্বলন হতে পারে। সাধারণত যারা পানি কম পান করেন তারা বেশি পরিমাণে পানি পান করুন এবং মিনারেল জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া্র অভ্যাস করুন। এতে করে হাত-পা ও শরীর জ্বালা-পোড়া অনেক অংশে কমে যাবে।