বিভিন্ন গুণাগুণে সমৃদ্ধ একটি পুষ্টিকর ফল হল কলা। কলাতে পুষ্টির মাত্রা বেশি। কলাতে আছে দৃঢ় টিস্যু গঠনকারী উপদান যথা আমিষ, ভিটামিন এবং খনিজ। কলাতে অনেক পরিমান ক্যালরির থাকে। কলা হল ক্যালরির একটি ভাল উৎস। এতে কঠিন খাদ্য উপাদান এবং সেই সাথে পানীয় জাতীয় উপাদান থাকে। যার সমন্বয় যে কোন অন্য ফলের তুলনায় অধিক।কলা একটি পুষ্টিকর ফল। নানা পুষ্টিকর উপাদান থাকে এতে। প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমাণ কলায় যে খাদ্যগুণ আছে তা হল শর্করা ৭.২%, আঁশ ০.৪%, ফ্যাট বা চর্বি০.৩%, আমিষ ১.২%, খনিজ লবণ ০.৮%, জল৭০.১% ও খনিজ লবণ এবং ভিটামিন থাকে কলায় যেমন ক্যালসিয়াম ৮৫মি.গ্রাম, ফসফরাস ৫০মি.গ্রাম, আয়রন ০.৬মি.গ্রা. ভিটামিন-সি, অল্প ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স ৮মি.গ্রা।
কলার জাত বা প্রজাতি
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলায় প্রায় ৪০-৫০টি জাতের কলার চাষ হয়ে থাকে। এসব জাতের মধ্যে অমৃতসাগর, সবরি, কবরি, চাঁপা, সিঙ্গাপুরি বা কাবুলী, মেহেরসাগর, এঁটে বা বিচি কলা, কাঁচকলা বা আনাজি কলা এবং জাহাজি কলা উলেৱখযোগ্য। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে বারিকলা-১, বারিকলা-২ ও বারিকলা-৩ নামে কলার তিনটি উন্নতজাতের কথা বলা হয়।
কলা চাষ
কলা গাছের চারা দুই রকমের। অসি চারা ও পানি চারা। পর্যাপ্ত পরিমান উর্বর এমন মাটিতে কলা চাষ করা যায়। তবে সুনিষ্কাশিত দো-আঁশ এবং বেলে দো-আঁশ মাটি কলা চাষের জন্য ভালো। এছাড়া জমি পর্যাপ্ত আলো বাতাসপূর্ণ হওয়া দরকার। অপরদিকে শীতকালে এবং প্রচুর আর্দ্রতাযুক্ত জলবায়ুতে কলা গাছ ভালো জন্মায়।
ভাদ্র মাস ছাড়া যে কোনো মাসেই চারা রোপণ করা হয়। তবে চারা রোপণের উপযুক্ত সময় মধ্য আশ্বিন থেকে মধ্য অগ্রহায়ণ এবং মধ্য মাঘ থেকে মধ্য চৈত্র। চারা রোপণের আগে ৫০ সেমি. দৈর্ঘ্য ৫০ সেমি. প্রস্ত এবং ৫০ সেমি. গভীর করে গর্ত তৈরি করতে হয়। একটি গর্ত থেকে অপর গর্তের বা এক চারা থেকে অপর চারার দূরত্ব রাখতে হয় ২ মিটার। এ হিসাবে বিঘাপ্রতি ৩৫০-৪০০টি চারা রোপণ করা যায়। কলা চাষের জন্য জমি তৈরির শেষ সময় বিঘাপ্রতি ৩.৫-৪.০ টন। পচা গোবর বা আবর্জনা পচা সার প্রয়োগ করা ভালো। সাধারণত দু-এক মাস পরপর এসব চারা মাটি সমান করে কাটা দরকার হয়। কলা গাছে প্রচুর জল দিতে হয়। কিন্তু গাছ অতিরিক্ত জল সহ্য করতে পারে না। তাই জল যাতে না দাঁড়ায় তার খেয়াল রাখতে হয়।
কলার গুনাগুণ
কলা নিরাপদে হজম হয়। কলা নরম হবার কারণে হজম হতে বাড়তি ঝামেলা দেখা দেয় না। দীর্ঘকাল স্থায়ী আলসার রোগের ক্ষেত্রেও কোন সমস্যা ছাড়াই কলা খাওয়া যায়। যা আলসারের জন্য ভালো। কলা পরিপাকতন্ত্রের অতিরিক্ত অম্লত্ব দূর করে। এটি পাকস্থলীর ভিতরের আস্তরণের ওপর একটি আবরণ সৃষ্টি করে আলসারের উত্তেজনাকে প্রশমন করে। কলা কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়ায় মত রোগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কলা পেকটিন সমৃদ্ধ যা জলেতে দ্রবনীয়। তাছাড়া কলা পেটের ক্ষতিকারক জীবানুকে উপকারি ব্যাকটেরিয়াতে পরিণত করতে থাকে।
কলা গেটে বাত ও বাতের চিকিৎসায় সবিশেষ উপকারি। হাড়ের গাঁটে গাঁটে বাতের ব্যাথার সমস্যায় ভুগছেন, তারা নিয়ম করে কলা খেতে পারেন। কলাতে উচ্চ পরিমাণ আয়রন থাকে। কলা এ্যানিমিয়ার চিকিৎসায় সহায়তা করে। কারণ তা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কলা ও দুধের মিশ্রণ শরীরের ওজন কমায়। ডায়েট চিকিৎসার ক্ষেত্রে ১০-১৫ দিন প্রতিদিন ৬টি কলা এবং চার গ্লাস দুধ খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।
কলার মধ্যে তিন ধরনের প্রাকৃতিক চিনির শক্তিশালী মিশ্রণ থাকে। ফ্রুক্টোজ, গ্লুকোজ এবং সুক্রোজ। কলার এসব প্রাকৃতিক চিনি রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখে। দিনের প্রয়োজনীয় কর্মশক্তির যোগান দেয়। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে, প্রতিদিন ২টি কলা খাওয়া ভালো। কারণ এতে থাকা উচ্চমাত্রার পটাসিয়াম ও নিম্নমাত্রার সোডিয়াম শরীরের রক্ত চাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া যারা হৃদরোগে ভুগছেন, তাদের জন্য কলা অত্যন্ত সহায়ক।
শরীরে তৈরি হওয়া ড্রিহাইড্রেশন পূরণে সহায়ক কলা। কারণ, কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকায় শরীরের আদ্রতা এবং ইলেক্ট্রোলাইটস ফিরে পেতে সাহায্য করে। কলাতে যে পরিমান ক্যালিশিয়াম থাকে শরীরের হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধির জন্য তা যথেষ্ট। প্রতিদিন ২টি কলা খেলে,তা মজবুত পেশী গঠন করবে।
যারা ধূমপান করেন তাদের জন্য কলা খুবই কাজের জিনিস। ধূমপান ছেড়ে দেয়ার পরে শরীরের নিকোটিনের জন্য আবারো ধূমপানের ইচ্ছে হয়। কলা খেলে তা শরীরে থেকে নিকোটিন অপসারণে ভূমিকা রাখে। ফলে ধূমপান ছাড়ার পর শারীরিক অস্বস্তির দূর করতে কলা সাহায্য করে।