আম হল একটি সুস্বাদু ফল। ভারতের জাতীয় ফল আম। আমের বৈজ্ঞানিক নাম ম্যাঙ্গিফেরা ইনডিকা । আম মসৃণ, শাঁসালো, এক আঁটিযুক্ত ফল। ফল গোলাকার, ডিম্বাকার, হূৎপিন্ডাকার, বৃত্তাকার, লম্বা বা সরু আকৃতির হয়ে থাকে। কাঁচা আম সাধারণত সবুজ, পাকলে সবুজাভ হলুদ, হলুদ, কমলা, মিশ্র রঙের লাল আভাযুক্ত, এমনকি সবুজও থেকে যেতে পারে। পাকা ফল আকারে ও গুণে নানা রকমের হতে পারে। বড় প্রজাতির একেকটি আমের ওজন হয় ৭৫০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত। সাধারণত আম বহু প্রজাতির হয়ে থাকে।
যেমন ফজলি, ল্যাংড়া, গোলাপখাস, আম্রপালি, মল্লিকা, সুবর্নরেখা। আমকে বলা হয় ফলের রাজা। আম গাছ বহু বছর বাঁচে। কিছু প্রজাতির আম আছে যারা ৩০০ বছর বয়সেও ফল দেয়।
আম চাষ
প্রায় ১০০ রকমের আমের জাত পাওয়া যায়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অসংখ্য আমবাগান আছে। যেখানে সাধারণত আম চাষ হয়। সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অধীনে দেশব্যাপী বিস্তৃত উন্নতজাতের আমের বাগান, খামার ও নার্সারি থাকে। উন্নতজাতের আমগাছের জোড়কলম উৎপাদন ও বিতরণের ব্যবস্থা আছে। সাধারণত আম গাছের বংশবিস্তার ঘটানো হয় জোড়কলম পদ্ধতিতে, এতে মূল আমের বৈশিষ্ট্যগুলি ঠিক থাকে। তবে গ্রামাঞ্চলে আমের আঁটি থেকেই এখনও আম গাছের বংশ বিস্তার ঘটানো হয়ে থাকে।
সাধারণত আম চাষ প্রায় সব রকম মাতিতেই হয়ে থাকে। তবে যেখানে মাটিস্তরের গভীরতা এক মিটারের কম ও মাটির নিম্ন স্তরে নুড়ি, শিলা, কাঁকর ইত্যাদি রয়েছে অথবা যে মাটি অতিরিক্ত আঠালো সেখানে আম গাছ ভালো জন্মায় না। উৎকৃষ্ট জাতের আমের খামার বা বাগান রয়েছে পলিমাটির স্তরসমৃদ্ধ গাঙ্গেয় সমভূমি এলাকায়। মাটিস্তর গভীর এবং আলগা নুড়ির একটা উপস্তর রয়েছে এসব এলাকায়। মাটির পি এইচ মাত্রা ৫.৫ থেকে ৭.৫ আম গাছের বৃদ্ধির জন্য ভালো। আমের ভাল ফলনের জন্য প্রয়োজন প্রচুর বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আম গাছে মুকুল আসে। আঁটি থেকে তৈরি গাছে ফল আসতে বেশ কয়েক বছর সময় লাগে। ফল আসা একবার শুরু হলে বছরের পর বছর ফলন বৃদ্ধি পায়। আঁটি থেকে তৈরি গাছ বাঁচে বেশি দিন। তাতে ফল ধরে ৬০ বছর বা তারও বেশি সময় পর্যন্ত।
আমের জাত
আম গাছ বিভিন্ন প্রজাতির হয়ে থাকে। প্রায় ৩০০ রকমের বা তার বেশি প্রজাতির আম হয়ে থাকে। তবে ফজলি, গোলাপখাস, ল্যাংড়া, হিমসাগর, বোম্বাই, সুরমা ফজলি, ইত্যাদি খুবই পরিচিত প্রজাতির আম। যা সারা দুনিয়া খ্যাত।
আমের গুনাগুণ
আম তৃষ্ণা মেটাতে সহায়তা করে। আম লিভার ভালো রাখে। আমে ভিটামিন-সি প্রচুর পরিমাণে থাকায় আম ব্লাড ডিজঅর্ডারের সমস্যাতেও উপকারী। ভিটামিন সি ছখের জন্য ভালো। চোখের কর্ণিয়া নরম হয়ে যাওয়া, এ ছাড়া বিফ্রেকটিভ সমস্যায়ও আম সমস্যা দূরীকরণে সাহায্য করে। আম যথেষ্ট পরিমাণে খেলে হেলদি এপিথেলিয়াম তৈরি হয়। যা শরীরের জন্য খুবই জরুরী। সাইনাসের সমস্যা অনেকটা কমে যায় আম খেলে।
আমে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় অ্যানেমিয়ার সমস্যা দূর করতে আম সাহায্য করে। ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় কনস্টিপেশন দূর করে আম। কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে ও শরীরে পটাশিয়ামের অভাব দূর করে থাকে আম। শরীরের এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করে আম। আমে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকায় এসিডিটি, মাসল ক্যাম্প, স্ট্রেস ও হার্টের সমস্যায় হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
ভিটামিন এ সমৃদ্ধ কাঁচা আম চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে। ক্যারোটিন চোখ সুস্থ রাখে। কাঁচা আমে ৯০ মাইক্রোগ্রাম এবং পাকা আমে ৮,৩০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন থাকে। শরীরে কোলেস্টেরল লেভেল কম রাখতে সাহায্য করে আম। ভিটামিন-সি প্রচুর পরিমাণে থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। গরমের সময় সর্দিতে আম উপকারী খুবই। হজমের দুর্বলতা কমাতে সহায়ক আম। কিডনির সমস্যা হতে দেয় না আম। এসিডিটি উপশমে ভালো কাজ করে থাকে পাকা আম।