জরায়ু মেয়েদের অন্ত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। একে আমরা ইউটেরাস বলি। একটি মেয়ে যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয় তখন প্রতি মাসে ঋতুস্রাব হয়। একটি নির্দিষ্ট বয়সের পরে গিয়ে যখন স্বামী স্ত্রী একসঙ্গে থাকে তখন জরায়ু প্রধান কাজ হয়ে থাকে গর্ভধারণ। স্বাভাবিকভাবেই এই নিয়মে মানুষের জীবন চলতে থাকে। এর বাইরে যখন জরায়ুতে নতুন করে কোন কিছু বৃদ্ধি হয় নতুন কোন একটি মাংসপিণ্ডের তৈরি হওয়ায় একেই বলা হয় টিউমার। এই টিউমার সাধারণভাবে ভালো ও খারাপ দুই ধরনের হয়। যখন ভালো হয় একে আমরা বলি বিনাইন টিউমার। আর খারাপ কি মানে কি আমরা সাধারণত ক্যান্সের বলে থাকি। জরায়ুতে টিউমার গুলো সাধারনত হয়ে থাকে একে বলে ফাইব্রয়েড, ইউটেরাস হল সবচেয়ে প্রচলিত। মেয়েদের এই রিপ্রোডাকটিভ জীবনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যেটি হয়ে থাকে সেটি হল ফাইব্রয়েড ইউটেরাস বা জরায়ু টিউমার।
নারীদেহের ফাইব্রয়েড টিউমার কি ক্যান্সার?
ফাইব্রয়েড হল নারীদেহে সাধারণত এক ধরনের টিউমার 25 শতাংশ নারীদেহে ফাইব্রয়েড থাকতে পারে। ৩০ থেকে ৪০ বছরের নারীদের মধ্যে ফাইব্রয়েড আক্রান্তের হার বেশি। কিন্তু স্বস্তির বিষয় হলো এই টিউমার হলেও কিন্তু ক্যান্সার নয়। এটি শরীরে ক্যান্সারের মতন কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলেনা এই টিউমার থেকে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা 1 শতাংশেরও কম। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার না করেই এই চিকিৎসা করা সম্ভব।
মূলত মহিলাদের জরায়ু তে ফাইব্রয়েড হয়ে থাকে। জরায়ুর বেশিতেও ভেতরে ত্বকের ফেলোপিয়ান টিউবের মুখে ব্রডলিগামেন্ট ও ডিম্বাণু এর পাশে ফাইব্রয়েড সৃষ্টি হতে পারে। অনুমান করা যৌবনাবতীর দেহে ইস্ট্রোজেন হরমোন নিঃসরণ এর সঙ্গে এই ফাইব্রয়েড সৃষ্টির কোন সম্পর্ক থাকতে পারে কারণ নারী দেহে যখন ইন্সট্রুমেন্ট সর্বাপেক্ষা বেশি ক্ষরণ হয় সেই সময় অর্থাৎ ২৫ থেকে ৪০ বছর বয়সে ফাইব্রয়েড তৈরি হয়।
আবার মেনোপোজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফাইব্রয়েড বৃদ্ধি থেমে যায়। ফাইব্রয়েডএর জন্য বেশি কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। শরীর অস্থির অনুভব, অকাল গর্ভপাত, রজঃস্রাব সমস্যা , কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্তস্বল্পতা, তাই বন্ধ্যত্ব বা সামরিক বন্ধত্ব হতে পারে এবং মূত্রথলিতে সংক্রমণ হতে পারে।
লক্ষণ
মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তস্রাব, ১০-১৫ দিন পর পর হঠাৎ হঠাৎ রক্তস্রাব দেখা দেয়। তলপেট ভারী অনুভূতি হওয়া, মাসিকের সময় পেটে অস্বাভাবিক ব্যথা হওয়া। ফাইব্রয়েড বড় হয়ে গেলে ক্ষুধামান্দ্য, ঘন ঘন প্রস্রাব পাওয়া, কোমর ব্যথা ও পায়ে জল জমার লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা
এ ব্যাপারে গাইনী বিশেষজ্ঞ বলেন, যদি ফাইব্রয়েড কোন ধরনের উপসর্গ না দেখা যায় আকারে খুব বড় না হয় ও এটিতে ক্যান্সার না হয় তাহলে অপারেশন করার প্রয়োজন পড়ে না কারণ মেনোপজের পর এর বৃদ্ধি আপনাআপনি থেমে যায়। এক্ষেত্রে রোগী ঋতুস্রাবের সমস্যা জন্য কিছু ওষুধ দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে হরমোন থেরাপি দিয়েও ফাইব্রয়েড শুকিয়ে দেওয়া সম্ভব।
জটিল পরিস্থিতিতে চিকিৎসা অপারেশন রোগী যদি কম বয়স হয় তবে শুধু টিউমারটি কেটে ফেলে দেওয়া হয়। বেশি বয়স্ক বা ও পরিবারের সন্তান না নিতে চাইলে জরায়ু কেটে ফেলে দেওয়া হয়। চিকিৎসক যদি মনে করেন আপনার অপারেশন করা প্রয়োজন তবে দেরি না করে অপারেশন করা ভালো অপারেশন না করলে অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে। ফাইব্রয়েড থাকা অবস্থায় সন্তান ধারণ করলে বেশি কিছু সমস্যা পড়তে হতে পারে এই সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সন্তান প্রসবের পর ফাইব্রয়েড সারিয়ে ফেলতে হবে। সিজারের সময় ফাইব্রয়েড অপসারণ করা হয়।